জৈব কীটনাশক স্প্রে ছবিঃ সংগৃহীত |
আপনার বাগানের গাছপালার অধিকাংশ রোগ বালাই, পোকামাকড় রাসায়নিক বা জৈব কীটনাশক প্রয়োগে দমন করা যায়। তবে ভাববেন না এমন কোন সর্ব রোগের মহৌষধ আছে যা প্রয়োগ করলেই আপনার গাছ রোগজীবাণু আর পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আবার গাছপালার রোগ দমনে এই কীটনাশক প্রয়োগই কিন্তু একমাত্র উপায় নয়। বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক এবং চাষ পদ্ধতি অনুসরন করেও আপানার বাগানের গাছপালা রোগমুক্ত রাখতে পারেন।
কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক
প্রয়োগে সাধারনতঃ পোকামাকড় এবং ছত্রাক দমন করা যেতে পারে কিন্তু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা নেমাটোড এই ভাবে দমন করা সম্ভব নয়।
কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক
রাসায়নিক যেমন ক্ষতিকর পোকামাকড় মেরে ফেলে তেমনি উপকারী পোকামাকড়ও মেরে ফেলে।ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়।
এসব রাসায়নিক মানুষের
স্বাস্থের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর এবং ক্যান্সারের মত প্রাণঘাতী রোগের কারন হতে পারে।
এসব বিবেচনায় নিলে, আপানার ব্যাক্তিগত বাগানে বাণিজ্যিক চাষাবাদে ব্যাবহ্রিত
রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করা কোনভাবেই উচিত হবে না। তাহলে
কি করা যেতে পারেঃ
১। জৈব
কীটনাশক প্রয়োগ করুন। এগুলো সাধারণত উপকারী কীট পতঙ্গ এবং মানুষের জন্য ক্ষতিকর
নয়। যেমনঃ
নিমের তেল, মেহগনি বীজের তেল ইত্যাদি ক্ষতিকারক কীট পতঙ্গ
মেরে ফেলতে খুবই কার্যকর। ৫এম এল নিম বা মেহগনির তেল, ২ এম এল লিকুইড সোপ ১ লিটার পানির সাথে মিক্স করে আপনার
বাগানের সবগুলো গাছে স্প্রে করুন। এভাবে সপ্তাহে একবার করে সব গাছে স্প্রে করতে
থাকুন। মনে
রাখবেন এই কীটনাশক শুধু মাত্র সফট বডি পোকামাকড় যেমনঃ এফিড, সাদা মাছি, জাব পোকা,
মিলিবাগ, রেড স্পাইডার মাইটস ইত্যাদির বিরুদ্ধে কার্যকর। শক্ত
খোলস যুক্ত পোকার ক্ষেত্রে এগুলো কাজ করে না।
২। সাধারণত
ক্ষতিকারক পোকামাকড় রাতের বেলা অ্যাক্টিভ হয়। রাতে
আলোর ফাঁদ জ্বেলে এসব পোকামাকড় মেরে ফেলুন।
৩। আপনি
যদি ছাদে বা বারান্দায় বাগান করে থাকেন তাহলে সাধারণ মাটির পরিবর্তে কোকো ডাস্ট ব্যাবহার
করুন। তবে তা ব্যাবহারের আগে স্টেরালাইজ করে নিতে হবে। এতে
করে আপনি নেমাটড এবং মাটিবাহিত ছত্রাকের হাত থেকে আপনার গাছকে মুক্ত রাখতে পারবেন।
৪। বাগানে
লাগানোর জন্য ভাইরাস মুক্ত বীজ, চারা বা গাছ ব্যাবহার করুন। রোগাক্রান্ত
গাছ কখনই বাগানে লাগাবেন না। এতে করে আপনার সুস্থ গাছগুলোতেও রোগের সংক্রামণ
হতে পারে। বাজার
থেকে কেনা গাছ পৃথক কোন স্থানে রেখে কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করুন কোন সমস্যা আছে কিনা। সুস্থতা
নিশ্চিত হয়ে তারপর বাগানে লাগান।
৫। গাছকে
ছত্রাকের হাত থেকে বাঁচাতে জৈব ছত্রাকনাশক ট্রাইকোডারমা প্রয়োগ করুন। অথবা
গাছ লাগানোর জন্য ট্রাইকোডারমা কম্পস্ট ব্যাবহার করতে পারেন।
৬। আপনার
বাগানে যদি শাকসবজি চাষ করেন তাহলে নেট হাউজ তৈরি করে নিন। এতে
করে আপনার বাগানে পোকামাকড়ের আক্রমন অনেকটাই প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
৭। আপনার
বাগানের বর্ষজীবী ফুল,সব্জি বা ফলের গাছ সিজন শেষে দ্রুত তুলে নষ্ট
করে ফেলুন।
৮। ঝর্না
দিয়ে পানি না দিয়ে ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতি ব্যাবহার করুন। এতে
করে একগাছ থেকে অন্যগাছে রোগের সংক্রামণের হার কমে যাবে।
এভাবে সমন্বিত ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে আপনি কোন রকম
রাসায়নিক কীটনাশক ব্যাবহার ছাড়াই আপনার বাগানকে রোগমুক্ত রাখতে পারেন।