আক্ষরিক অর্থে বনসাই মানে টবে বা পাত্রে লাগানো গাছ। কিন্তু আসলে বনসাই হচ্ছে একটি শিল্প যেখানে টবে বা পাত্রে লাগানো গাছকে বছরের পর বছর ধরে নানা ভাবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট আকৃতি দেওয়া হয় ।
বনসাইয়ের উৎপত্তি চীনে হলেও মুলত জাপানে এর সমৃদ্ধি এবং বিকাশ লাভ করেছে। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও বনসাই বাগানিদের কাছে খুবই পছন্দের একটি বিষয়।
আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত ধারনা হচ্ছে বৃক্ষ জাতীয় গাছ ছোট পাত্রে লাগিয়ে কয়েক বছর ছেটে-ছুটে ছোট করে রাখলেই বনসাই হয়ে যায়। কিন্তু আসলে এটি বনসাই তৈরির একটি ধাপ মাত্র। একটি খর্বাকৃতির বহু বছরের পুরানো টবে লাগানো গাছকে একজন বনসাই শিল্পী তার কল্পনা শক্তি আর সৃজনশীলতা দিয়ে বনসাই নামক শিল্পকর্মে পরিনত করতে পারে। একটি বনসাই তৈরির জন্য আপনাকে বহু বছর ধরে এর উপর কাজ করে জেতে হবে । আর এ কারনেই অর্থ মুল্যে বনসাই অত্যন্ত দামি শিল্পকর্ম ।
বনসাই |
বনসাই তৈরির জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গাছ হচ্ছে বট এবং জুনিপার। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী অন্যান্য অনেক গাছের বনসাই করা যেতে পারে। যেমনঃ আম, তেতুল, অর্জুন, বাগানবিলাস, রঙ্গন, বক্স উড, নিম, রেন্ট্রি, পাইন, শেওড়া, ডুমুর, লেবু , ডালিম, জলপাই, জাম ইত্যাদি।
বনসাই তৈরির জন্য আপনার প্রথমে উপযুক্ত গাছ সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি বীজ থেকে বা কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করে নিতে পারেন। তবে এভাবে তৈরি চারা বনসাই তৈরির উপযুক্ত হতে পাচ-সাত বছর লেগে যেতে পারে। তাই সময় বাঁচাতে চাইলে নার্সারি থেকে বনাসাই এর উপযোগী চারা কিনে আনতে পারেন অথবা প্রাকৃতিক ভাবে জন্মান এমন চারা সংগ্রহ করতে পারেন।
এরপর আপনার গাছের উপর স্টাইলিং প্রয়োগ করুন। প্রথমে প্রনিং এর মাধ্যমে গাছকে আপনার মনের মত আকৃতি দিন। এর পর তামার তার ডাল পালার সাথে পেঁচিয়ে গাছের আকৃতি নির্ধারণ করুন। কয়েক মাসের মধ্যে ডাল-পালা স্থায়ী আকৃতি পেয়ে গেলে তার খুলে ফেলতে হবে।
আপনার বনসাই এ রেগুলার পানি দিন এবং সার প্রয়োগ করুন। প্রতি এক-দুই বছর পর পর রি-পটিং করুন। রেগুলার প্রনিং করুন যাতে স্টাইল ঠিক থাকে। মনে রাখবেন বনসাই একটি লিভিং আর্ট। যে গাছটি আপনি বনসাই বানাচ্ছেন তা প্রাকৃতিক নিয়মেই পরিবর্তিত হতে থাকবে। তাই আপনার বনসাই তৈরির কাজ কখনো শেষ হবে না।